মাসয়ালা : ইতেকাফকারীর মাথা ধৌত করা, চুল আঁচড়ানো, সুগন্ধি ব্যবহার করা, মাথা ন্যাড়া করা ও সৌন্দর্য গ্রহণ করা বৈধ। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ঋতুস্রাবের সময় নবী (সা.)-এর চুল আঁচড়ে দিতেন, যখন তিনি মসজিদে ইতেকাফ করতেন, আর আয়েশা ঘর থেকে তার মাথা গ্রহণ করতেন। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
আবু দাউদের এক বর্ণনায় আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদে ইতেকাফ করতেন, তিনি হুজরার ফাঁক দিয়ে আমার কাছে তার মাথা দিতেন, আমি তা ধুয়ে দিতাম।
মাসয়ালা : ইতেকাফকারী কোনো প্রয়োজনে মসজিদের বাইরে গেলে সালাম বা সালামের জবাবের জন্য না থেমে রাস্তায় চলতে চলতে কিংবা প্রয়োজনীয় কাজটি সারতে সারতে সালাম ও সালামের জবাব দিতে পারবে।
এতে তার ইতেকাফের কোনো ক্ষতি হবে না। হাদিস আছে, আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইতেকাফ অবস্থায় (প্রয়োজনে বাইরে গেলে) যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে অতিক্রম করতেন তখন হাঁটা অবস্থাতেই ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিয়ে নিতেন। -আবু দাউদ: হাদিস নং ২৪৭২; আহকামে ইতেকাফ: মুফতি তকি উসমানি: ৪০
মাসয়ালা : শরিয়ত মতে, জরুরত হলো যেসব প্রয়োজন পূরণে ইতেকাফকারীকে মসজিদ থেকে বের হওয়ার জন্য শরিয়ত অনুমতি দিয়েছে। যেমন- প্রস্রাব-পায়খানার প্রয়োজনে। যদি মসজিদে অবস্থানকালে গোসল করা সম্ভব না হয়। যদি মসজিদে অবস্থান করে অজু করা সম্ভব না হয়। খাওয়া-পরার জিনিস বাইরে থেকে আনা লাগে। যদি এনে দেওয়ার মতো লোক না থাকে। মুয়াজ্জিনের আজান দেওয়ার জন্য বাইরে যাওয়া লাগে। যে মসজিদে ইতেকাফ করা হচ্ছে, সে মসজিদে যদি জুমার ব্যবস্থা না থাকে তবে জুমা আদায়ের জন্য অন্য মসজিদে যাওয়া। মসজিদ ভেঙে যাওয়া ইত্যাদির কারণে অন্য মসজিদে স্থানান্তরিত হওয়া। এসব প্রয়োজনীয়তা ছাড়া ইতেকাফকারীর জন্য বাইরে যাওয়া নাজায়েজ এবং এতে ইতেকাফ ভেঙে যাবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪৫
মাসয়ালা : যেসব প্রয়োজনীয়তার কথা উপরে উল্লেখ করা হলো, এসব ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ইতেকাফকারী মসজিদের সীমানা থেকে বের হলে তা এক মুহূর্তের জন্য হলেও ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ২/২১৩
সেটা ইচ্ছায় হোক বা ভুলক্রমে। তবে ভুলক্রমে হলে ইতেকাফ নষ্ট করার গোনাহ হবে না। -ফাতাওয়ায়ে শামি
মাসয়ালা : রোজা ইতেকাফের জন্য শর্ত। যদি কেউ ইতেকাফ অবস্থায় রোজা ভেঙে দেয়, হোক তা কোনো ওজর বা অপারগতার কারণে, ইচ্ছায় বা ভুলক্রমে ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২১৩
মাসয়ালা : ইতেকাফকারী যদি বেহুঁশ বা পাগল হয়ে যায়, জিন-ভূতের আছরের কারণে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে এবং এ অবস্থা যদি একদিন একরাত বিদ্যমান থাকে তবে ধারাবাহিকতা খতম হয়ে যাওয়ার কারণে ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। যদি একদিন একরাত পূর্ণ হওয়ার আগেই হুঁশ বা বুদ্ধি ফিরে আসে, তবে ইতেকাফ নষ্ট হবে না। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪৫০
মাসয়ালা : ইতেকাফকারী কোনো শিরক বা কুফরি কাজ করলে ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে। অনুরূপ নারীদের হায়েজ-নেফাস শুরু হয়ে গেলে এবং স্ত্রী সহবাস বা যে কোনো প্রকার যৌন সম্ভোগ করলে ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪৭
যে সব কারণে ইতেকাফ মাকরূহ হয়
মাসয়ালা : সম্পূর্ণ নীরব থাকা এবং কারোর সঙ্গে আদৌ কথা না বলা, মসজিদে পণ্য সামগ্রীর ক্রয়-বিক্রয়, প্রাণীর ছবিযুক্ত পেপার দেখা, আর্থিক বিনিময়ের মাধ্যমে তালিম দেয়া, কলহ-দ্বন্ধ ও বাজে কথা চর্চা করা ইতেকাফকারীর জন্য মাকরুহ। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪৮-৪৪৯, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২১৩
ইতেকাফ ভাঙা জায়েজ যে কারণে
ইতেকাফকারী যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, যার চিকিৎসা মসজিদের বাইরে যাওয়া ছাড়া সম্ভব নয় তবে তার জন্য ইতেকাফ ভেঙে দেওয়ার অনুমতি আছে। -ফাতাওয়ায়ে শামী
বাইরে কোনো লোক ডুবে যাচ্ছে বা আগুনে দগ্ধ হচ্ছে তাকে বাঁচানোর আর কেউ নেই, অনুরূপ কোথাও আগুন লেগেছে, নেভানোর কেউ নেই তবে অন্যের প্রাণ বাঁচানোর এবং আগুন নেভানোর জন্য ইতেকাফকারীর ইতেকাফ ভেঙে দেওয়ার অনুমতি আছে।
জোরপূর্বক মসজিদ থেকে ইতেকাফকারীকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় যেমন ওয়ারেন্ট এসে গেলে ইতেকাফ ভেঙে দেওয়া জায়েজ। সেরূপ ইতেকাফকারীর যদি এমন সাক্ষ্য দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে, যা শরিয়তানুযায়ী তার জন্য ওয়াজিব সেরূপ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ইতেকাফ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি আছে।
মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততির অসুস্থতার কারণেও ইতেকাফ ভেঙে দেওয়া জায়েজ। তেমনি পরিবারের কারো প্রাণ, সম্পদ বা ইজ্জত আশঙ্কার সম্মুখীন হলে এবং ইতেকাফ অবস্থায় তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে ইতেকাফ ভেঙে দেওয়া জায়েজ। এ ছাড়া যদি কোনো জানাজা হাজির হয় এবং জানাজা পড়ানোর কেউ না থাকে তখনো ইতেকাফ ভেঙে দেওয়া জায়েজ। -ফাতহুল কাবির
উল্লিখিত প্রয়োজন পূরণ করতে বের হলেই ইতেকাফ ভেঙে যাবে, তবে গোনাহ হবে না। -বাহরুর রায়েক
ইতেকাফ ভেঙে গেলে করণীয়
সুন্নত ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর মসজিদের বাইরে চলে আসা জরুরি নয়। বরং বাকি দিনগুলো নফলের নিয়ত করে ইতেকাফ করা যেতে পারে। এর দ্বারা সুন্নতে মোয়াক্কাদা তো আদায় হবে না কিন্তু নফল ইতেকাফের সওয়াব পাওয়া যাবে। যদি অনিচ্ছাকৃত ও ভুলক্রমে ইতেকাফ নষ্ট হয়, তবে হতে পারে আল্লাহতায়ালা আপন রহমতে সুন্নত ইতেকাফেরও সওয়াব দিয়ে দিতে পারেন। সে কারণে ইতেকাফ নষ্ট হয়ে গেলে উত্তম হলো বাকি দিনগুলোও পূর্ণ করা। ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর ইতেকাফকারী মসজিদ থেকে চলেও আসতে পারে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। আবার এক দিন পরে গিয়ে নফল ইতেকাফের নিয়ত করে মসজিদে আবার ইতেকাফ শুরুও করতে পারে, তাও জায়েজ আছে। যেদিন ইতেকাফ নষ্ট হয়েছে শুধু সে দিনেরই কাজা করা ওয়াজিব। পুরো ১০ দিনের কাজা করা ওয়াজিব নয়। -ফাতাওয়ায়ে শামি।
Leave a Reply